!Go Lions – Nittany Lions!


#pennstate #football

Pennsylvania State University-র Statistics Department-এ দু-তিন দিন যাতায়াতের পরে হঠাৎই আবিষ্কার করলাম যে এখানে কোনো ক্লাস ফোর কর্মচারী নেই। আমি যখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তখন সেখানে শৃঙ্খলা কথাটার মানে নিয়ে কেউ মাথা ঘামাত না। এখনও ঘামায় না। B.A-B.Sc পরীক্ষা দিয়ে এক বছর বসে থাকতে হত, কারণ রেজাল্ট বেরত না। কেন, কে জানে? যে কোনো দিন কিছু কর্মচারীর যদি মনে হত যে আজ আমরা ক্যাম্পাসের দরজা খুলব না, তাহলে দরজা খোলাও হত না, কোনো ক্লাসও হত না। যেন তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হুকুম-দেনে-ওয়ালা খলিফা। আমরাও তাতেই অভ্যস্ত ছিলাম, কারণ তা যে না হতে পারে, সেটা আমাদের ধারণার মধ্যে ছিল না। চীনদেশের মেয়েরা যেমন জানত কাঠের জুতো পরে পা ছোট করে রাখাই নিয়ম। পায়ের বাড়ের সঙ্গে জুতোও বাড়বে, এ আবার হয় নাকি?

আমেরিকায় দেখলাম ক্লাস ফোর কর্মচারী না থাকলেও দিব্যি সব চলে। রাত বারোটায় যেমন চার জন যুবক কলকাতা শাসন করত, তেমনি Statistics Department শাসন করত তিনজন সেক্রেটারি - সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা ঘড়ি ধরে, সোম থেকে শুক্রবার। আমরা বিদেশী ছাত্ররা ঠিকমত স্টাইপেন্ড পাচ্ছি কি না, ট্যাক্সের কাগজে সই করলাম কি না, জেরক্স মেশিন ঠিক আছে কি না, না থাকলে টেকনিশিয়ানকে খবর দেওয়া – থেকে শুরু করে কবে ডিপার্টমেন্টের পিকনিক, কতজন যাবে, ক্রিসমাস পার্টির সময় পাঞ্চবোল কোথা থেকে আসবে পর্যন্ত ঊনকোটি-চৌষট্টি রকমের হ্যাপা এরাই সামলাতো অত্যন্ত দক্ষতায়। পরে যখন Penn State-এ বিভিন্ন সময়ে Visiting Faculty হয়ে গেছি অয়ন আর আমি, এরাই আমাদের অফিসিয়াল কাগজপত্র পাঠাত, এমন কি একবার একটা বাড়িও খুঁজে দিয়েছিল।

সমস্ত ইউনিভর্সিটি চালু রাখা আর পরিষ্কার রাখার দায়িত্বে ছিল Office of Physical Plant। Physical Plant নামটা আমার খুব ভালো লাগত। একটা বিরাট মহীরুহর মত এতো বড় একটা ইউনিভার্সিটির যত্নআত্তি করছে। Janitorial Service, বরফ পরিষ্কার করা, গাছ কাটা, Elm গাছে কীটনাশক ছড়ানো, সময় বুঝে ড্যাফোডিলের বাল্ব পোঁতা – এ সব ছিল তাদের কাজ। Penn State-এর প্রধান প্রবেশ পথের দুপাশে ছিল কিছু ঐতিহাসিক Elm গাছ, যাদের বয়স শতাধিক। প্রধান প্রবেশ পথ অবশ্য কথার কথা, কারণ পুরো ক্যাম্পাসে কোনো পাঁচিল ছিল না। যে কোনো দিক দিয়ে, হেঁটে, সবসময়েই ক্যাম্পাসে ঢোকা যেত।

ক্লাস ফোর কর্মচারী না থাকলে সব অধ্যাপকদের চা-কফি করে কে খাওয়াবে? সবটাই আপন হাত জগন্নাথ। কফি মেশিন আছে, কফি পাউডার আছে, চিনি আছে, দুধ আছে, কাগজের কাপ আছে আর একটা বাক্স আছে। কফি বানাও, খাও আর দামের জন্য একটা কোয়ার্টার বাক্সে ফেলে দাও। না দিলে? না দেবে, সেটা তোমার ব্যাপার। কেউ তোমার কাছ থেকে হিসেব নেবে না। সারা রাত, সারা দিন কফি রুম খোলা। কফির মেশিন চুরিও যায় না, এমনকি কফির পাউচও চুরি গেছে বলে কখনো শুনিনি। সবটাই পারস্পরিক বিশ্বাসে চলে। কখনো কোনো CC Camera কোথাও থাকত বলে জানি না। তা বলে vandalism হত না নাকি? অবশ্যই হত। Football weekend-এ Campus Police জেরবার হয়ে যেত গাড়িতে দাগ লাগানো, কাঁচ ভাঙা, undergraduate hall-গুলোর সামনে বিয়ার খেয়ে মাতলামি, এমনকি কিছু কিছু date rape-এর কেস নিয়েও। বাদবাকি সময়ে Campus Police-এর কাজ ছিল শুধুমাত্র পার্কিং টিকিট দেওয়া। মাঝে মধ্যে রাতের বেলায় এসে যদি দেখি যে ডিপার্টমেন্টে ঢোকার চাবি বাড়িতে ফেলে এসেছি, তখনও Campus Police-ই ভরসা।

Penn State একটা State University, আরো ঠিক মত বললে একটা Land Grant University। State of Pennsylvania ১৮৬৩ সালে জমি দিয়েছিল একটা কলেজ তৈরী করতে যেখানে চাষবাসের উন্নতির গবেষণা হবে। Penn State অনেকটা চাষের জমির মালিক ছিল, সে আমিও দেখেছি। Agriculture Department আর Food Science Department ছিল খুব নাম করা। তার outlet ছিল Penn State Creamery। আহাহা, কি দুর্দান্ত সেখানের আইসক্রিম। আর কত রকমের ফ্লেভার – চকোলেট, ভ্যানিলা ইত্যাদি ছাড়াও Keeny Beany Chocolate, Bittersweet Mint, Butter Pecan, Cherry Jubilee।  Cherry Jubilee-টা আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল – কত বড় বড় আস্ত আস্ত আসল চেরী থাকত আইসক্রিমের মধ্যে!

যেহেতু সরকারী অনুদানে তৈরী, Penn State-এ in-state tuition আর out of state tuition-এ আকাশ পাতাল তফাৎ। আমরা তো না হয় বিদেশী, আমাদের সম্বন্ধে আমেরিকার কোনো দায়িত্বই সে অর্থে নেই, কিন্তু পাশের রাজ্য New York বা New Jersey থেকে যারা পড়তে আসবে তাদেরও out of state tuition-ই দিতে হত। সেইজন্য undergraduate ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত নিজেদের রাজ্যের বাইরে পড়তে যেত না। Graduate Student-দের অবশ্য আলাদা ব্যবস্থা। আমাদের ডিপার্টমেন্টে সব গ্র্যাজুয়েট ছাত্র ছিল Graduate Assistant, আমাদের ক্লাস পড়াতে হত। আমার সঙ্গে যারা পড়তে এসেছিল তার মধ্যে মাত্র একটি ছেলেই পুরো চার বছর স্কলারশিপ পেয়েছিল। তার নাম Clint Coakley। শেষ যা জানি সে University of West Virginia-র শিক্ষকতা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়ে Vermont-এর একটা ছোট গ্রামে কাঠের আসবাবপত্রের কারখানা চালায়। ক্লিন্টের কথা পরে বলব।

আমেরিকার ইউনিভার্সিটিগুলোর মধ্যে এখন Penn State Statistics-এর ranking ১৯, কিন্তু ১৯৮৭ সালে সম্ভবত ৩০ নম্বরের আশেপাশে কোথাও ছিল। State University মানে কিন্তু আমাদের সরকারী কলেজের মত নয়, যে সব খরচ সরকার দেবে। খানিকটা সাপোর্ট পাওয়া যায়, বাকিটা ইউনিভার্সিটিদের নিজেদের যোগাড় করতে হয়। ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টিকে গ্রান্ট লিখতে হয়, গবেষণা করার জন্য টাকা চাইতে হয়। কখনো বড় কর্পোরেশন বা বিজনেস বা অত্যন্ত ধনী পরিবার ইউনিভার্সিটিকে বহু মিলিয়ন ডলার দান করে। যেমন ১৯৮৮ সালে Eberly Family দিয়েছিল Penn State College of Science-কে। College of Science-এর নাম হয়ে গেল Eberly College of Science, Statistics Department পেল একটা Eberly Chair যেখানে Professor C. R. Rao, প্রথম পাঁচজন সবচেয়ে বিখ্যাত তৎকালীন জীবীত statistician-দের মধ্যে একজন, এলেন University of Pittsburgh থেকে। ডিপার্টমেন্টের ranking বেড়ে গেল কয়েক ধাপ।

 

Penn State-এর Official Emblame

কিন্তু তাই নিয়ে কেই বা মাথা ঘামায়, জনা কতক academician ছাড়া? ১৯৮৬ সালে Penn State ছিল ফুটবলে এক নম্বর, আমেরিকার সব কলেজ – ইউনিভার্সিটির মধ্যে চ্যাম্পিয়ান! Joe Paterno – Joe Pa – ছিলেন ফুটবল টীমের কোচ। State College-এ Joe Pa-র খাতির ছিল ঠিক ভগবানের পরেই – ইয়ে মানে, আগেও হতে পারে, তবে কি না সে কথাটা ওনার আর ভগবানের মধ্যেই রইল না হয়! শুনেছি Penn State-এর একটা নিজস্ব প্লেন ছিল, যেটা একমাত্র ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট আর Joe Pa ব্যবহার করতে পারতেন। Creamery-র একটা আইসক্রিমের ফ্লেভার ছিল Peachy Paterno। আমেরিকান ফুটবল কিন্তু সকার নয়, বরং রাগবির সঙ্গে কিছু মিল থাকলেও থাকতে পারে। ফুটবল নাম হলে কি হয়, বলটা ছুঁড়তে হয় বেশী। আর সে যে কি ভীষণ ঠ্যালাঠেলি, গুঁতোগুঁতি, সে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। Offensive team, Defensive Team, Punting Team, Quarter back, tight-end, running back, wide receiver কত শত নাম। আর ফুটবলের নিয়ম আছে অন্তত একটি হাজার। আমার ধারণা রেফারিরাও সব নিয়ম জানে না! Technically খেলার সময় এক ঘন্টা, চারটে ১৫ মিনিটের quarter। কিন্তু খেলা চলে মোটামুটি তিন ঘন্টা। না, injury time-এর বালাই নেই। খেলার নিয়মই এমন যে বল নিয়ে যে দৌড়বে, বা বল যে ছুঁড়ে দেবে, তাকে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিলে, সেই প্লে-র সেখানেই ইতি। আবার সেই জায়গা থেকে পরের প্লে শুরু হবে, অথবা উল্টো পক্ষ সেখান থেকে খেলা শুরু করবে।

Penn State-এর নিক নেম হল Nittany Lions। রং হল সাদা আর নীল – না না কলকাতা শহরের বর্তমান অনুপ্রেরণার রং নয় – ঘন নীল, নেভি ব্লু। Blue and White – Penn State-এর যেদিকে তাকাবে সেদিকে নীল-সাদা ফেস্টুন, স্টিকার, দোকানে নানা রকম merchandise, T-shirt, sweatshirt, sweat-pant, hoodies, জ্যাকেট। আমার গাড়ির পেছনে স্টিকার লাগানো ছিল: If God isn’t a Penn State fan, why is the sky blue and white?  আর একটা স্টিকারও আমার খুব পছন্দের ছিল – We bleed Blue and White। বয়স্ক মহিলা আর পুরুষেরা পরেন Proud to be a Penn State Mom/Dad লেখা T-shirt বা sweatshirt। আর চতুর্দিকে দেখা যায় Nittany Lion-এর মুখ। Creamery-র দুটো আইসক্রিম ছিল Mint Nittany আর Lions Tracks।

প্রথম প্রথম তো বুঝতামই না Nittany Lion-টা কি জাতীয় প্রাণী। পরে জানলাম Mountain Lion বা Cougar-কে বলে Nittany Lion। Nittany বা Nita-nee ছিলেন ঐ অঞ্চলের একজন Native American warrior princess। Appalachian Mountains কোনাকুনি ভাবে চলে গেছে Pennsylvania-র মধ্যে দিয়ে। যে উপত্যকার মধ্যে State College, তার নাম Happy Valley, পাশের উপত্যকার নাম Nittany Valley। দুইয়ের মধ্যে Mount Nittany। ফোকলোর বলে Princess Nittany মারা যাবার পর যেখানে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল, এক রাতের মধ্যে সেখানে Mount Nittany পাহাড় তৈরী হয়ে যায়।

কথা হচ্ছিল ফুটবলের, Penn State-এর প্রাণের ধন। ক্যাম্পাসের এক কোনে প্রকান্ড Beaver স্টেডিয়াম। তাতে এক লাখ লোক ধরে। ভাবা যায় Pennsylvania-র সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম একটা ইউনিভার্সিটি টাউনে, যেখানে ফিলাডেলফিয়া আর পিট্সবার্গ দু-দুটো বড় শহরে দু-দুটো নাম করা প্রফেশনাল ফুটবল টিম আছে? শনিবার কলেজ ফুটবল খেলার দিন, আর রবিবার প্রফেশনাল ফুটবল খেলা। যেদিন Beaver স্টেডিয়ামে খেলা থাকে সেদিন শহরের চেহারাই বদলে যায়। হাজারে হাজারে লোক অন্তত দু-ঘন্টা আগে থেকে চলল স্টেডিয়ামে। মনেও ভেবোনা সবাই স্টেডিয়ামে ঢুকবে। আর্ধেক লোক স্টেডিয়ামের বাইরে Tailgate করবে, মানে এন্তার বিয়ার আর hotdog খাবে, নাচবে, লাফাবে, চ্যাঁচাবে, হৈ-চৈ আর মস্তি করবে। কলেজ ফুটবল, কলেজ বাস্কেটবল – আমেরিকায় এদুটো ভীষণ জনপ্রিয়। Nittany Lion-এর খেলা দেখতে আনেক দূর থেকেও লোকে আসে।

এতো লোক গাড়ি রাখবে কোথায়? University Park অর্থাৎ ক্যাম্পাসের বাইরের দিকে তখন বড় বড় পার্কিং লট ছিল। এখন শহর অনেক বেড়ে গেছে, এখন কি করে জানি না। দর্শকরা সেই সব দূরের লটে গাড়ি রেখে বাসে করে স্টেডিয়ামে আসত। প্রতি বছরই একটা home game চিহ্ণিত থাকত White Out বলে। মানে সেদিন প্রতিপক্ষকে কোনো গোল দিতে দেওয়া যাবে না। বীভার স্টেডিয়াম শুদ্ধু দর্শক সাদা টিশার্ট বা সাদা সোয়েট শার্ট পরে গেল খেলা দেখতে। তাও খেলা ভাঙার সময় College Avenue-তে যানজট হত। আবার Penn State সেরকম কোনো প্রতিপক্ষকে হারালে আমরা সবাই ফুর্তিতে গাড়ি নিয়ে হর্ণ বাজিয়ে College Avenue-তে বেরিয়ে পড়তাম। সবাই সবাইকার সঙ্গে Hi Five করছে – সে এক ব্যাপারই আলাদা।

বোঝাই যাচ্ছে ফুটবল খেলোয়াড়রা সব এক-সে-বঢ়কর-এক হিরো। ফুটবল খেলতে পারত কেবল মাত্র undergraduate ছাত্ররা। National Collegiate Athletic Association-এর নিয়ম মেনে। নিয়ম না মানলে ছাত্রদের শাস্তি তো হতই, কিন্তু কলেজেরও শাস্তি পাওনা থাকত। হয়ত পরের এক বছর বা দু-বছর নিয়মভাঙা কলেজকে বসিয়ে দেওয়া হল, তারা আর ফুটবল খেলতে পারবে না। লজ্জাজনক তো বটেই, কিন্তু তার চেয়েও বড় হল, খেলা না থাকলে কলেজের আর্থিক ক্ষতির পরিমান। সে চান্স সাধারণত কেউ নিতে চাইত না। খেলোয়াড়দের নিয়ম মতে কোর্স নিতে হত, পাশও করতে হত। যেহেতু অন্তত একটা Statistics কোর্স সব undergraduate-দেরই নিতে হত, আমার ক্লাসে বিভিন্ন সময়ে ফুটবল খেলোয়াড়রা থাকত। বিশাল লম্বা-চওড়া চেহারা, অনেকেই কালো, তাদের ক্লাস করতে দেখতাম না বিশেষ, কিন্তু পরীক্ষা দিতে তো আসতে হত। ক্লাস করবে কি করে, বছর ভোর তো প্র্যাকটিস চলছে আর Fall Semester-এ খেলা। টীমের জন্য চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা থাকত। এরা প্রায় সবাই ফুটবল স্কলারশিপে Penn State-এ পড়ত। এদের জন্যে ইউনিভার্সিটি টিউশনের ব্যবস্থা রাখত। প্রাইভেট টিউশন নয় আমাদের দেশের মত, ইউনিভার্সিটির টিউশন সার্ভিস ছিল। যাদের মনে হত কোনো বিষয়ে যথেষ্ট ভালো বুঝতে পারছে না, সেই ছাত্রছাত্রীরা টিউশনের জন্যে নাম লেখাতো। যারা পড়াতো তাদেরও কিছু সুবিধে হত, আমেরিকায় কলেজে পড়তে অনেক টাকা লাগে। Undergraduate Student Office সেমেস্টারের মধ্যে একবার একটা ফর্ম পাঠাত আমাদের কাছে, যে অমুক, অমুক ছাত্র ফুটবল টীমে আছে, তারা কি ক্লাসে D-র ওপরে grade রাখতে পারছে?

 

বীভার স্টেডিয়াম

 

 

 

যখন হোলি চাইল্ড ইনস্টিটিউটে পড়তাম, মনে আছে ক্লাসের একজন একদিন রেগে এসে বলল,

 

“একজন গার্জেন স্কুলের নিন্দে করছিল, তাকে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিয়েছি”।

“সে কি রে, তুই নিজেই তো সারাক্ষণ স্কুলের নিন্দে করছিস! তুই আবার অন্যকে কি বলবি?”

“আমার স্কুল, আমি নিন্দে করতেই পারি। তা বলে অন্য কেউ করবে কেন?”

আমার মনে হয় Proud কথাটার ঠিক বাংলা প্রতিশব্দ নেই। অহঙ্কার বা গর্ব বললে যেন ঠিক মানেটা বোঝা যায় না। “I am proud of my alma mater”  এর বাংলা কি করব? “আমি আমার স্কুল-কলেজ নিয়ে গর্বিত”? এটা যেন জোর করে বলা, যেমন আজকাল বিজ্ঞাপনের ভাষা দেখি – ভালো দেখতে লাগুন, বা মালামাল হয়ে যান! তার কারণ কি এই, যে আমাদের সমাজে বা ভারতীয় মানসিকতায়, বিনয় বা নম্রতার ওপর জোর দেওযা হয়, অহংবোধকে বাড়তে দেওয়া হয় না? Penn State Proud, Proud to be a Nittany Lion, Proud to be a Lion Ambassador – আমরা কোনোদিন বলেছি Proud to be a Presidencian? কলকাতায় কখনো দেখিনি ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিজেদের স্কুল বা কলেজের নাম লেখা জামা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমাদের ছাত্রজীবনে তো দেখিনি বটেই, এখনও কি দেখতে পাই? আমেরিকায় দেখলাম জামার ট্যাগে লেখা আছে Created with pride in the U.S.A.। তখন তা দেখে বেশ হাসাহাসি করেছিলাম তাও মনে আছে। কিন্তু আজ চল্লিশ বছর পরে বুঝতে পারি Pride কথাটার মধ্যে অনেকটা positivity আছে। বালুচরী বা কাঞ্জিভরম শাড়ির সঙ্গে Silk Mark-এর ট্যাগ লাগানো থাকে, কিন্তু কেন লেখা থাকে না Woven with Pride in India?

Penn State-এ এসে যেটা সবচেয়ে ভালো লেগেছিল তা হল একটা sense of belonging – আমরা সবাই Penn State-এর অংশ, We are Penn State Proud। Department-এ, খেলার মাঠেও। বীভার স্টেডিয়ামে এক লাখ মানুষ যখন চেঁচাত We are Penn State, তা শুনতে পাওয়া যেত Pond Lab-এ বসেও, যেটা অন্তত দেড় মাইল দূরে। আমাদের বাড়িতে টিভি ছিল না অনেকদিন পর্যন্ত। অনেক সময়েই খেলা দেখতে বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে যেতাম। স্টেডিয়ামেও গেছি, তবে খুব বেশী নয়। ০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে -১০ ডিগ্রি চিল ফ্যাক্টর নিয়ে, স্টেডিয়ামের ওপরের সীটে বসে থাকাটা উত্তেজনাকর হলেও, আরামদায়ক কিছুতেই নয়। কিন্তু এই যে একটা possessiveness তৈরী হয়ে গেল, এটা আমার কলেজ, আমার ফুটবল টীম, আজ চল্লিশ বছর পরেও তার টান বুঝতে পারি।