পুলিশি বন্দোবস্ত


#police #driving #traffic

বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ বলে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আমার নাকি ঘোরতর প্রেম| আমি যদি রাস্তায়, মানে কলকাতা শহরের রাস্তায় – সল্ট লেক বা হাইওয়েতে নয়, ওগুলো তো কলকাতা পুলিশের এক্তিয়ারের বাইরে – নিজে গাড়ি চালিয়ে বেরই তাহলে নাকি তারা ঠিক টের পায় আর গন্ধ শুঁকে শুঁকে এসে হাজির হয়|

এই তো সেদিন বেথুন কলেজের পাশের মিষ্টির দোকানের রাস্তাটায় যেমন হল| একটা অনুষ্ঠানের জন্য কুড়িটা সন্দেশের বাক্স হবে, ২৫ টাকা করে| আরো একটা বাক্স হবে স্পেশাল| দোকানের সামনে গাড়ি রাখার জায়গা নেই| কলকাতার কোন রাস্তাতেই বা থাকে? যদি বা দূর থেকে দুটো গাড়ির মধ্যে একটু ফাঁক দেখি, সেখানে একটা দু-চাকা বা সাইকেল ভ্যান গলানো আছে| দু-চাকার কথা জানি না, তবে সাইকেল ভ্যানে একজনকে দিবানিদ্রা দিতে দেখে বুঝলাম সে এক্ষুণি নড়বে না| আমার WagonR-কে অগত্যা ত্যারছা করে রেখে দোকানে মিষ্টির অর্ডার দিচ্ছি আর ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গাড়ির দিকে তাকাচ্ছি| হঠাৎ দেখি একটা সাদা হেলমেট গাড়িটাকে প্রদক্ষিণ করছে! আমি এক লাফে গাড়ির কাছে|

─ এসে গেছি, আমি এসে গেছি|

─ এমন করে গাড়ি রেখেছেন! কেন রেখেছেন? দেখছেন না আপনার গাড়ির জন্যে রাস্তা আটকে আছে?

─ Sorry! Sorry!! এক্ষুণি চলে যাচ্ছি| এই চলে গেলাম|

─ আবার ইংরিজি বলছেন! এ্যাঁ| আপনার বাড়ির সামনে কেউ এমন করে গাড়ি রাখলে কি হত? হ্যাঁ?

─ খুব খারাপ হত| আমি খুব রেগে যেতাম|

বলতে বলতে আমি গাড়ির ভেতরে| সন্দেশ মাথায় উঠল| গাড়ি বার করতে গিয়ে দেখি হেলমেটের মালিক তাঁর দু-চাকাটি এমনভাবে আমার গাড়ির পেছনে রেখেছেন যে এক ফুটের বেশি গাড়ি পেছতে গেলে তাঁর সঙ্গে আমার শারীরিক ঘনিষ্ঠতা এড়ানো যাবে না| বেশ কয়েকবার গাড়ি ইঞ্চি ইঞ্চি আগুপেছু করে, কোনোমতে দু-চাকার স্পর্শ এড়িয়ে গাড়ি নিয়ে বেরতে পারলাম| উনি কিন্তু আমার চলে যাবার পথ সুগম করতে ওনার লাল স্কুটার তো সরালেন না বটেই, বরং rear view আয়নায় দেখলাম সাদা হেলমেটের তলা থেকে পুরো সময়টা কটমট করে চেয়ে রইলেন|

পরে ফিরে এসে সন্দেশের বাক্সগুলো নিয়ে যেতে হল|

আমার গাড়ি চালানোর হাতে খড়ি ছাত্রাবস্থায় আমেরিকাতে| সেখানে সবাই নিয়ম মেনে গাড়ি চালায়, এক New York শহর বাদে| কেউ অকারণে হর্ণ বাজায় না, New York শহর বাদে| এক জামাইবাবু একসময়ে বলেছিল, “বুঝলে, New York-এ গাড়ি চালিয়ে মনে হয় যেন দেশেই গাড়ি চালাচ্ছি”| কিন্তু আমরা থাকতাম একটা ছোট ইউনিভার্সিটি শহরে| সেখানে কোনোরকম যানজট হলে সেটা পরদিন Centre Daily Times-এ খবর হত| CDT ছিল স্থানীয় খবরের কাগজ| কে কত বড় কুমড়ো ফলাচ্ছে, কে কাকে বিয়ে করছে, কোন দোকানে সেল চলছে – এইসব খবর সেখানে থাকত| যাই হোক, অন্য কথায় চলে যাচ্ছি| আমেরিকায় থাকার সময়ে যে সব বদভ্যাস রপ্ত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম – রাস্তায় পরিস্কার আর স্পষ্ট করে লেখা direction দেখা আর সেটা মেনে চলা| আর কলকাতার ট্র্যাফিক পুলিশ ধরেই নেয় যে কলকাতা শহরে যারা গাড়ি চালাবে তারা আপনা-আপনি বা কোনো অলৌকিক শক্তিবলে জেনেই যাবে কোন রাস্তা সপ্তাহের কোন দিন কোন সময় থেকে কোন সময় ‏পর্যন্ত কোন দিকে একমুখী, কোন রাস্তা থেকে কোন দিনে কোন ক্ষণে কোন রাস্তায় ডান বা বাঁদিকে মোড় নেওয়া যায়|

বাগবাজার অঞ্চলে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে একদিন ফিরছি| বহুদিন ঐদিকে যাইনি| তখন বেশ অন্ধকারও হয়ে গেছে| কেমন করে জানব যে গ্যালিফ স্ট্রিটে রাইট টার্ন নেওয়া যায় না| আমি গুটি গুটি টার্ন নিয়ে এগোচ্ছি আর মনে মনে কেমন একটা সন্দেহ হচ্ছে – আমার আগে বা পিছে কোনো গাড়ি বি টি রোডের দিকে যাচ্ছে না কেন? সব গাড়িই উল্টো দিক থেকে আসছে, তাদের সংখ্যাও কম| ভাবতে ভাবতে বি টি রোডের মোড়ে পৌঁছে গেছি| দেখি বাঁদিকের লেন, অর্থাৎ যে দিক দিয়ে আমি যাচ্ছি, তার সামনে একটা হলুদ গার্ড রেল বসানো| আর ট্রাফিক সিগন্যালটা লাল| আলোটা সবুজ হলে গার্ড রেলকে পাশ কাটিয়ে ফুড়ুৎ করে পালাব কি না ভাবছি, এমন সময়ে বি টি রোডের অন্ধকার থেকে ট্রাফিক সার্জেন্টের এক চেলা ধীর এবং নিশ্চিত পায়ে আমার জানলার পাশে এসে হাজির|

─ আপনি কি জানেন না এ রাস্তাটা ওয়ান ওয়ে?

─ কি করে জানব? কোথায় লেখা আছে?

─ কাশীপুরের মোড়ে|

─ আমি তো তার আগের একটা গলি থেকে রাইট টার্ন নিয়েছি| আমি কি করে জানব?

─ আপনি কি দেখতে পাননি সব গাড়ি উল্টোদিকে যাচ্ছে?

─ তাতে কি হল? আমি ভেবেছি এ দিকে যাবার গাড়ি কম|

─ তাহলে আপনি এখন কোথায় যাবেন?

─ বি টি রোডে ডানদিকে যাব|

─ কি করে যাবেন? সামনে তো গার্ড রেল|

─ গার্ড রেলের পাশ কাটিয়ে? ওদিক থেকে আসার গাড়ি যখন থাকবে না| আলোটা সবুজ হলে|

─ ওসব জানি না, আপনি এসে সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলুন|

বুঝলাম সার্জেন্ট এসে কথা বলতে পারবেন না| তিনি এই পুরো সময়টা বি টি রোডের পূর্বপ্রান্তে একটা দু-চাকায় পশ্চাৎ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন| গাড়িতে আর এক বন্ধু ছিল সঙ্গে| তাকে বললাম “তুই গাড়িতেই থাক, আমি কথা বলে আসি|” সে অবশ্য আসতেই চাইছিল| যাতে কথোপকথনটা মুখেই থাকে, হাত ব্যবহার পর্যন্ত না গড়ায়| যা হোক, গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পেরিয়ে আমি সার্জেন্টের সম্মুখীন হলাম|

─ উল্টোদিকে আসছিলেন কেন?

─ বুঝতে পারিনি বলে|

─ বড় বড় করে লেখা আছে দেখতে পাননি?

─ যে গলি থেকে টার্ন নিয়েছি সেখানে লেখা ছিল না|

─ গলির মুখে ট্র্যাফিক লাইট ছিল| তাতে কি রাইট টার্ন দেখাচ্ছিল?

─ অনেক সময়ে সবুজ অ্যারো দেখালেও সেদিকে যাওয়া যায় না| আমি ভেবেছি এখানে উল্টো সিস্টেম|

─ লেখাও আছে নো রাইট টার্ন|

─ কোথায়?

─ রাস্তার উল্টোদিকে|

─ ওখানটা তো অন্ধকার| ছোট ছোট করে লেখা থাকলে কেমন করে দেখব?

─ কোথায় যাবেন?

─ সল্ট লেক|

─ ঠিক আছে| এখন যান| আর এরকম করবেন না, বুঝলেন?

─ একদম না, মোটেও না, কোনোদিন না, ঘাট হয়েছে – বলতে বলতে এসে আমি গাড়ি নিয়ে ভোঁ দৌড়|

তা বলে কেউ যেন মনে না করে যে, পুলিশের সঙ্গে বাক্‌বিতন্ডায় কেবল আমিই জিতে যাই| একবার, আমি নই, আমাদের ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছিল| চালপট্টি লেন দিয়ে এস্‌প্ল্যানেডের দিকে যাচ্ছিলাম| একটা ছোট্ট লেফ্ট টার্ন নিয়ে আবার লেফ্ট টার্ন নিতেই, যাকে বলে হাতে নাতে ধরা পড়ে গেলাম| এই সার্জেন্টটি অতিশয় ভদ্র| ড্রাইভারকে গাড়ি পাশে লাগাতে বলায় আমাকেও গাড়ি থেকে নামতে হল|

─ কি ব্যাপার?

─ ঐ রাস্তাটুকু ওয়ান ওয়ে|

─ লেখা ছিল না তো কোথাও|

─ হ্যাঁ ম্যাডাম, টার্ন নেবার মুখে লেখা আছে| আপনারা হয়ত মিস করে গেছেন|

─ না মোটেই ছিল না| আপনারা একজন সঙ্গে আসুন দেখিয়ে দেবেন কোথায় লেখা আছে|

সঙ্গে সঙ্গে ভদ্রলোক একজনকে পাঠালেন| আমরা গিয়ে দেখলাম সত্যিই লেখা আছে এক জায়গায়, লেখাটা বড় বড় হরফে নয়, কিন্তু পড়া যায়| আর সন্ধের অন্ধকারও নয় যে বলব দেখা সম্ভব নয়| অতএব সুড়সুড় করে ফিরে এসে আবার সার্জেন্টের সামনে|

─ কি ম্যাডাম, লেখা আছে তো? এসব জায়গায় কিন্তু অনেক ফাইন হয় ম্যাডাম, আমি আপনাকে খুব কম যা করে দিতে পারি, সেটাই দেখছি| আপনি এখনই ফাইন দিয়ে রসিদ নিতে পারেন বা পরে onlineও পেমেন্ট করে দিতে পারেন, যা খুশি|

আর একবার, অনেকদিন আগে, বোধহয় ১৯৯৭-৯৮ সালে, আমাকে পাকড়েছিল, ট্র্যাফিক পুলিশ নয়, কোনো এক পুলিশের বড়কর্তার বাড়ির সামনের পাহারাদারেরা| বেশ অনেক রাতে, দশটার পরে তো বটেই, আরো রাতেও হতে পারে, আমি পার্ক স্ট্রিট  অঞ্চলের কোনো একটা রাস্তা ধরে মহানন্দে যাচ্ছিলাম| হঠাৎ তারা হাত দেখিয়ে গাড়ি থামিয়ে জানাল সেই রাস্তাটা নাকি দিনে-রাতে সবসময়েই একমুখী| বোঝো ব্যাপার! জানি না, তাদের এরকমভাবে রাস্তায় গাড়ি থামানোর এক্তিয়ার আছে কি না| তবে যদি বড়সাহেবের সিকিউরিটির ব্যাপার হয়, বা অন্তত সেই ছল ধরা যায়, তাহলে গাড়ি থামানো কেন, আরো অনেক কিছুই হয়ত করা সম্ভব ছিল|

ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে সংযোগের আর একটা গল্প বলে শেষ করি| এটা ঘটেছিল সল্ট লেকে| এবং ব্যাপারটা, যাকে বলে, সিরিয়াস| সুইমিং পুলের কাছের একটা দোকান থেকে ফিরছি, সঙ্গে কন্যা| রবিবার বিকেল, প্রচুর লোক| করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কাটিয়ে সবে লোকজন বাইরে বেরনো শুরু করেছে| আমি গাড়ি পার্ক করলাম ব্লকের মধ্যে খোলামেলা দেখে| সামনে একটা লাল স্কুটার, একটা ছেলে বসে মোবাইল ঘাঁটছে| মিনিট দশেক পরে দোকান থেকে ফিরে এসে দেখি ছেলেটা বসেই আছে| আমি গাড়ি নিয়ে বেরলাম, মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বলল,

─ মা, ঐ দেখ, ওরা আমাদের ফলো করছে|

─ তুই কি করে জানলি?

─ আমি ঠিক বলছি| দেখ, ও আর একজনকে ডেকেও নিয়েছে| আমরা রওনা হলাম, ওরাও বাইক ঘুরিয়ে আসছে|

আমি দেখলাম, সত্যিই লাল স্কুটার আমার খানিকটা পেছনে, আর তাতে একটার বদলে দুটো ছেলে| তখন অন্ধকার হয়ে এসেছে| রাস্তায় অনেক গাড়ি, ভিড়, শনৈঃ শনৈঃ এগোচ্ছি| বাইকটা কিন্তু কখনোই খুব কাছে আসছে না| আমি বাড়ির রাস্তায় এগোচ্ছি, আর ভাবছি এখন আমার কি করণীয় হতে পারে| আমি কি বাড়ি যাব? আমি কি সোজা বিধাননগর সাউথ পুলিশ স্টেশনে যাব? বাইকের নম্বর যাতে দেখা না যায় এরকম দূরত্বেই তারা থাকছে| আর তখনও আমার পুরোপুরি বিশ্বাস হয়নি যে আমরা অনুসৃত হচ্ছি, যদিও শঙ্করী একেবারে নিশ্চিত|

হঠাৎ আমার কি মনে হল, আমি বাড়ি যাবার জন্য ডানদিকে না ঘুরে, বাঁদিকে ঘুরলাম| সেন্ট্রাল পার্কের সামনে ট্র্যাফিক লাইট, ট্র্যাফিক পুলিশ| সেখানে একটা ইউ-টার্ন নিলাম| বাইকও যখন ইউ-টার্ন নিল, তখন আর অবিশ্বাসের অবকাশ রইল না| খানিকটা এগিয়ে আবার আমি, স-ল্যাজ, ইউ-টার্ন নিলাম| আবার আলোয় দাঁড়িয়ে, পেছনে, গাছের অন্ধকারে, আমার ল্যাজও দাঁড়াল| এবার যেই লাল আলো সবুজ হয়েছে, আমি সটাং ট্র্যাফিক পুলিশের সামনে গিয়ে ঘচাং করে ব্রেক কষে দাঁড়িয়ে বললাম, “ঐ দেখুন, ঐ যে লাল বাইক পালিয়ে যাচ্ছে, ও আমাকে এতক্ষণ ফলো করছিল”|

পুলিশ তখনই ফোনে দু-এক জায়গায় লাল বাইক আটকানোর কথা বলল বটে, কিন্তু সল্ট লেকের এত রাস্তা এদিক-ওদিক, যে তাকে তো আর ধরা সম্ভবই হল না| আমি তা ভাবিও নি, আমার শুধু দরকার ছিল ল্যাজটিকে খসিয়ে ফেলা|

এই ঘটনার একটা উপসংহার আছে| বাড়ি ফেরার পরে এই গল্প অয়নকে বললাম, কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধবকেও বললাম| তারা উপদেশ দিল, “বিধাননগর সাউথ পুলিশ স্টেশনে ফোন কর্”| করলাম| যিনি ধরেছিলেন, বললেন,

─ এখন না, এখন না| আমরা ভি আই পি মুভমেন্ট নিয়ে এখন ব্যস্ত আছি| পরে| পরে ....

আর এক বন্ধু উপদেশ দিল, “চিঠি লিখে দে”| দিলাম| বিধাননগর সাউথ, বিধাননগর ইস্ট, কমিশনারেট আর মহিলা থানা| দিন পনেরো পর মহিলা থানা আমাকে আর কন্যাকে ডেকে পাঠালো, অমুক দিন, অমুক সাব-ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দেখা করতে হবে| গেলাম| মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন,

─ আচ্ছা, কি হয়েছিল, বলুন|

চিঠিতে সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে লিখে দিয়েছিলাম, আবার সব বললাম| উনি একটা সাদা কাগজে কিছু কিছু লিখলেন| তারপর বললেন

─ আচ্ছা, তাহলে আমরা এখন কি করতে পারি?

─ দেখুন, আমি চিঠি দিয়েছি পনেরো দিন আগে| একটা দোকানের সামনে থেকে ঐ ছোকরা আমাদের পিছু নিয়েছিল| দোকানের নাম চিঠিতে দিয়ে দিয়েছি, সময় বলে দিয়েছি| সব দোকানে এখন C C TV থাকে| চিঠিতে এটাও বলেছিলাম, কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছিল দোকানদার ছোকরাকে চেনে| আপনারা তখনই যদি footage দেখতে চাইতেন, হয়ত তাকে ধরতে পারতেন| এখন আর কি করতে পারেন আমি তো বলতে পারব না| আচ্ছা, আসি, নমস্কার|