বাড়ি ঘর দোর


#statecollege #pennstate #home

Penn State-এ আমি ছিলাম ছাত্র অবস্থায় পাঁচ বছর, তার পরে বিভিন্ন সময়ে Visiting Faculty হিসেবে আরো হয়ত বছর তিনেক। মোটমাট আট বছরের বেশী নয়। তার মধ্যে হিসেব করে দেখেছি আটটা বাড়িতে থেকেছি – তিন দিন, তিন সপ্তাহ, তিন বছর – and everything in between!

শহরের নাম State College আর ক্যাম্পাসের নাম University Park। প্রথম গিয়ে উঠলাম State College-এ অয়নের গ্রীষ্মকালীন আবাসে। তিন দিন যাকে বলে living together! তা বলে যেন কেউ না ভাবে বিরাট রোমান্টিক ব্যাপার। অয়ন তখন ছিল একটা বাড়ির একটা ঘরে, রান্নাঘর আর বাথরুম কমন। State College প্রধানত ছাত্রদের জায়গা বলে, ক্যাম্পাসের কাছাকাছি অনেক বাড়িই এভাবে ভাড়া দেওয়া হত। হয়ত দোতলা বাড়ির ওপর-নীচে মিলিয়ে পাঁচটা শোবার ঘর, একটা রান্নাঘর আর দুটো বা আড়াইটে বাথরুম। শোবার ঘর তোমার নিজস্ব, বাকি সবই ভাগের মা। সুতরাং তাদের চেহারাও গঙ্গা না পাওয়ার মত। ফ্রাইং প্যান আর Dutch oven ছাড়া রান্নাঘরে ছিলোও না কিছু। Dutch oven নামটাও নতুন শিখলাম, বিরাট বড় রান্নার বাসন, উনুন নয়। আমি আবার কোনো দিনই রান্নাবান্নায় তুখোড় নই। বিদেশ যাবার আগে রাতের রুটি করায় মাকে সাহায্য করা ছাড়া রান্নাঘরে আমার বিশেষ কোনো কাজ থাকত না। কখনো কখনো অবশ্য রেগে গিয়ে বেগুন ভাজা করে নিতাম, যদি দেখতাম রাতের মেনুতে খালি পেঁপের ঝোল আর কাঁচকলার ঝাল। State College-এ প্রথম দিন একটা ফুলকপির তরকারি রেঁধেছিলাম – কপি আর আলু মোটামুটি হলুদ সমুদ্রে ভাসমান টাপু হয়ে রইল – আর আমার রান্নার খ্যাতি রটে গেল নিউ ইয়র্ক পর্যন্ত – সেখান থেকে এক বন্ধু ফোন করেছিল জানতে যে আমি ঠিকঠাক এসে পৌঁচেছি কি না।

Graduate Student-রা ইউনিভার্সিটির কাছে একটু আদর বেশী পায়। যদিও তাদের জন্যে ইউনিভার্সিটির খরচ বেশী, মানে তাদের অনেকেই টিউশন দেয় না। বরং তাদের জন্য ডিপার্টমেন্ট খরচ করে। তাদের জন্য ইউনিভার্সিটি মোটামুটি ভাল বাড়ির ব্যবস্থা করে, ফ্রিতে নয় যদিও। বিবাহিত আর অবিবাহিতদের জন্য আলাদা আবাসন। আমি প্রথমে গিয়ে এইরকমই একটা বাড়িতে উঠলাম – Nittany Apartments on University Park Campus। তার পরেই বিয়ে করে ফেললাম। ব্যস, তখন তো আর সেখানে থাকার উপায় নেই। এদিকে নতুন বাড়ির লিজ শুরু হবে জানুয়ারি মাসে। তাহলে উপায়?

Graduate School আর Department-গুলো সবসময়ে এক নিয়মে চলে না, যদিও তারা একই ইউনিভার্সিটির অঙ্গ। আমার সঙ্গে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আর তার বর, যে আবার বিবাহসূত্রে আমার ভাগ্নে, Penn State-এর Mathematics Department-এ ছাত্র হিসেবে যোগ দিয়েছিল। কলকাতা ইউনিভর্সিটির ব্যাপার তো, পরীক্ষা-টরীক্ষা সম্বন্ধে সে নিজস্ব মতে চলে। তা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ যতই গোল্লায় যাক না কেন। অথচ M.A বা M.Sc-তে পরীক্ষার সময় ঠিক হয় প্রতিটি বিভাগে আলাদা ভাবে। আমার ঠিক সময়ে Penn State-এ যোগ দেওয়া প্রায় কেঁচে গিয়েছিল। M.Sc Dissertation-এর  viva voce-র দিন কিছুতেই ঠিক হচ্ছিল না। কেন? কে জানে? কোনো ছাত্রী বিদেশে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে মাস্টারমশাইরা তো খুশি হবেন। দেখা গেছিল এটা ধ্রুব সত্য ছিল না। শেষ অবধি যেদিন বিদেশের প্লেন ধরব, সেদিন সকালে আমার viva voce-র আয়োজন হয়েছিল। আমি অবশ্য আগেই Department-কে জানিয়েছিলাম যে হয়ত সেমেস্টার শুরুর দিনে হাজির হতে পারব না। Professor Harkness লিখেছিলেন কোনো অসুবিধে নেই, যেন আমি সব পরীক্ষা শেষ করে দেশ ছাড়ি।

আমার বন্ধুরা কিন্তু M.A পরীক্ষা না দিয়েই দেশ ছেড়েছিল। তাতে তাদের Department-এর কোনো আপত্তি ছিল না; বাদ সাধল Graduate School। বলে দিল, তোমাদের ডিপার্টমেন্ট যাই বলুক, ডিগ্রি তো দেব আমরা, দেশের মাস্টার্স শেষ করেছ এমন প্রমাণ না থাকলে বাপু তোমরা PhD পাবে না। ওদের আবার তড়িঘড়ি দেশে এসে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল! আর সেই সময়ে ওদের বাড়িতে আমরা বাস করেছিলাম তিন সপ্তাহ। বিয়ের পরে আমরা প্রায় না ঘরকা না ঘাটকা হয়ে পড়েছিলাম।

নতুন বাড়িটার সন্ধান কোথা থেকে পেয়েছিলাম এখন আর মনে নেই। একেবারে downtown-এ। তিনতলা বাড়ির দোতলায় একটা studio apartment – একটাই ঘর, একটু রান্নার জায়গা, বাথরুম আর closet। পুরনো বাড়ি, নীচে নানান দোকানের মধ্যে Wendy’s, আমার একটা বেজায় পছন্দের খাবার জায়গা। তখন ৯৯ সেন্টে একটা বাটিতে একটা প্রকান্ড baked potato পাওয়া যেত, আর তার সঙ্গে salad bar থেকে যা চাও, যত চাও, বাটি ভরে নিয়ে যাও। আমাদের আসবাবপত্রের মধ্যে অয়নের একটা বড় mattress ছিল। কিন্তু আরো কিছু তো চাই – চেয়ার, টেবিল, বইখাতাপত্র রাখার একটা ছোট বুক শেলফ, রান্নার বাসন, খাবার থালা।

Penn State বা অন্য যে কোনো ছোটো ক্যাম্পাস ইউনিভর্সিটিতে তৈজসপত্র হাতবদল হয়। ছাত্ররা সব আসে শহরের বাইরে থেকে। যে ক’বছর ক্যাম্পাসে থাকে, কিছু সস্তার জিনিস কিনে নেয়। যখন চলে যায়, সে সব নিয়ে যাবার মত অবস্থা থাকে না। অনেক সময় ছোটখাটো আসবাবপত্র রাস্তার ধারে ফেলে রেখে চলে যায় – একটা বড় কার্পেট, একটা ছোট টেবিল বা চেয়ার, গেরস্থালীর টুকিটাকি, বাঁধানো ছবি। সেরকম ভালো হলে অন্য কেউ তুলে নিয়ে যায়, আরো বছর দুয়েক হয়ত ব্যবহার করে, তারপর পাশ করে চলে যাবার সময় আবার ফেলে দিয়ে চলে যায়। এরকম ছোটখাটো জিনিস আমিও দু-একটা তুলে এনেছি বিভিন্ন সময়। কোভিড তো তখন ধারণার মধ্যেও ছিল না, জিনিসটা আস্ত থাকলেই চলত। বড় জোর বাড়িতে এনে ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হত।

আমাদের প্রথম ফার্নিচারও ছিল সেইরকম বহু হস্তান্তরিত। কোথাও বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম ফোল্ডিং টেবিল, চেয়ার, একটা বেঞ্চি, একজনের বসার মত একটা বড় চেয়ার, এইসব আছে, খুব সস্তা, হয়ত পাঁচ ডলার। ফোন করে, বাসে চেপে চলে গেলাম আমাদের বাড়ি থেকে অন্তত পাঁচ মাইল দূরে। কিনেও ফেললাম। এবার সেগুলো আনব কি করে? মাথায় করে আনা সম্ভব নয়। অগত্যা পাবলিক বাস ভরসা।

বাসের ড্রাইভার বোধহয় জীবনে প্রথম এরকম অনুরোধের সম্মুখীন হল। বাসে ভিড় ছিল না, পেছনে সীটের মাঝখানে আমরা হুড়মুড় করে সবকটা জিনিস তুলে দিলাম। কিন্তু বাসের চলার ধাক্কায় সেসব তো এদিক-ওদিক। একবার সব পড়ল গড়িয়ে। ড্রাইভার সামনে থেকে বকে দিল, “Can’t you hold on to the stuff?” আমরা সরি-টরি বলে তাদের জড়িয়ে ধরে বসলাম। যাই হোক কোনো কিছু না ভেঙে, নিজেরা পড়ে না গিয়ে, বাড়ির কাছের স্টপে পৌঁছলাম। তখন দেখি ড্রাইভার সাহেবও এসে টেবিল, চেয়ার নামানোতে হাত লাগিয়েছে। নিজেই বলছে, “Sorry, I yelled at you”। আমরা আর কি বলব! তাকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে হাতে হাতে তিনটে ব্লক সেসব বয়ে নিয়ে চলে এলাম। আমাদের Penn State-এর বসবাসকালে আরো ফার্নিচার জুটিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু এগুলোও শেষ পর্যন্ত ছিল।

আমরা যে এর মধ্যে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে এসেছি, সে কথা বাঙালী বন্ধুরা কেউ জানত না। একদিন ঠিক হল তাদের বাড়িতে নেমন্তন্ন করে এ খবর দেওয়া হবে। নেমন্তন্ন করলে তো খাওয়াতে হয়। ভাত আর ডাল করতে শিখে গেছি ততদিনে। বাগীশার শাশুড়ি একটা চিলি চিকেনের রেসিপি পাঠিয়েছিলেন, সেটাও প্র্যাকটিস করে খানিকটা বশে এনেছি। বাঁধাকপির তরকারি কেমন করে রাঁধতে হয় মীনাক্ষীকে ফোন করে জেনে নিলাম। আর শখ হল আনারসের চাটনি বানাব। নিশ্চয় সোজাই হবে, বিশেষ করে টিনের আনারস পাওয়া যায়, কাটাকুটিরও ঝঞ্ঝাট নেই। আমাকে কেউ বলেছিল চাটনি বানানো খুব সোজা। একটু তেলে এক চামচ পাঁচফোড়ন দিয়ে, আনারস দিয়ে, অনেক চিনি দিয়ে একটু নেড়ে চেড়ে জল দিয়ে ফোটালেই – voila! কিন্তু দেখলাম তেল বেশি হয়ে গেছে, তখন আরো একটু আনারস দিতে হল, তখন চিনি কম পড়ল, অয়নকে বাজারে যেতে হল, তারপর সেটা কিটকিটে মিষ্টি হল, তখন আরো আনারস দিতে হল – অর্থাৎ একটা slowly-convergent series-এ তেল, আনারস আর চিনি দেওয়া হতে লাগল। আনারসের চাটনির রং হবার কথা সোনালী, আমার চাটনির রং দাঁড়াল পোড়া বাদামী। একজন নিমন্ত্রিত খুব অবাক হয়ে জানতে চাইল, “শ্রবসী, তুমি এই শীতে কুমড়ো পেলে কোথা থেকে?”

তারপর State College-এর বাঙালী মহলে রাষ্ট্র হয়ে গেল, “শ্রবসীর বাড়ি এখন কেউ যেও না; ও বাড়িতে আনারস আছে !”

আমেরিকাতে বেশির ভাগ প্রবাসী বাঙালীরাই খুব ভালো রাঁধতে পারতেন – ছাত্ররাও – পুরুষ, মহিলা সবাই। বাড়িতে জনা পঞ্চাশেক নিমন্ত্রিতকে ষোড়শোপচারে খাওয়ানো – এ নিয়মিত ব্যাপার ছিল। State College-এও দেখেছি, পরে Texas-এও। তার উল্টো পিঠে আমার মত আরো কয়েকজনের কথা জানা আছে। একজন গল্প বলেছিলেন, তাঁর রুমমেট ডিমের ডালনা বানাতে গিয়ে পেঁয়াজ, রসুন কষে সেদ্ধ ডিম দিয়ে নাড়ছেন তো নাড়ছেনই, ডিমের রং যে সাদা, সেই সাদা, সে আর লাল হচ্ছে না। গলদঘর্ম অবস্থায় আবিষ্কার হল যে সেদ্ধ ডিমের খোসাটা ছাড়ান হয়নি, কারণ সেটা কেউ ওনাকে বলে দেয়নি।

আমেরিকাতে অনেক বাড়িই ফ্রেমের তৈরী। বাইরের দেওয়াল ইঁটের, কিন্তু ভেতরের partitioning wall গুলো বোর্ডের। দেওয়ালে ছবি বা পোস্টার টাঙানো যেমন সুবিধে, প্রাইভেসির তেমনি অসুবিধে। আমাদের অ্যাপার্টমেন্টটা ছিল একটা কোনায়, তার পাশে আরো হয়ত দুটো অ্যাপার্টমেন্ট। হঠাৎ এক রাতে শুনি পাশের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মহিলা কন্ঠে কিরকম যেন একটা শব্দ আসছে। আমি তো প্রায় ভাবছি পুলিশকে ফোন করব কি না, কেউ কাউকে খুন টুন করছে কি না কে জানে! একটু পরে শব্দটা থেমেও গেল। কিছুদিন পরে আবার সেই রকম শব্দ। পরে টের পেয়েছিলাম পাশে যারা থাকত, এ সব ছিল তাদের আদর-সোহাগের বহিঃপ্রকাশ।

আমার প্রতিবেশীরা সবাই ছিল undergraduate ছাত্র। শুক্র-শনিবার রাতে উদ্দাম পার্টি। এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল প্রচন্ড আওয়াজ আর ধাক্কায় – বাড়িটাই যেন কেঁপে উঠল। দরজার বাইরে চিৎকার চেঁচামেচি। একটু পরে সব আস্তে আস্তে থেমে গেল। পরদিন সকালে ইউনিভার্সিটি যাবার সময় লক্ষ্য করলাম দেওয়ালের গায়ে এত জোরে ঘুঁসি মেরেছে যে একটা বোর্ড ভেঙেই গেছে। আর একটু হলে পুরো দেওয়াল ফুটো হয়ে আমার ঘরেই উঁকি মারতে পারত।

একটা সেমেস্টার ওখানে ছিলাম। আবার ২০০৮-এ থাকলাম ঠিক পাশের ব্লকে একটা দুই বেডরুমের অ্যাপার্টমেন্টে। তখন দেখলাম Wendy’s উঠে গেছে, সেখানে আর কোনো একটা fast food-এর দোকান হয়েছে, আর সামনে Starbuck’s। পরিচিত দোকানের মধ্যে একমাত্র Indian Grocery Store টিকে আছে। আর Ye Olde College Diner তখনও রমরম করে চলছে।

Diner হল আমাদের ধাবা। ফ্যান্সি খাবার কিছু ওখানে পাওয়া যাবে না, কিন্তু যা পাওয়া যাবে পুরো পেট ভরা - বার্গার, ক্লাব স্যান্ডুইচ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, onion rings, all day breakfast, any time omelet, কফি ইত্যাদি। দাম মোটামুটি সস্তা। College Diner-এর বিখ্যাত ছিল grilled stickies। কি দিয়ে বানাত কে জানে, ঝোলা গুড়ও হতে পারে। যেমন নাম, তেমনই তার ব্যবহার, কামড়ালে দাঁত থেকে ছাড়ান যেত না। আমার একটুও সুবিধে লাগত না, কিন্তু College Diner-এর বিখ্যাত grilled stickies দূর-দূরান্ত থেকে লোকে এসে বাক্স ভর্তি করে কিনে নিয়ে যেত। কিছু পেস্ট্রি পাওয়া যেত – pumpkin pie বা eclair। সেই কোন ছোটবেলায় Enid Blyton-এর বইতে Famous Five-কে eclair খেতে দেখতাম, এবার নিজেই চেখে দেখার সুযোগ পেলাম।

আমার সবচেয়ে পছন্দ ছিল Homestyle fries – আলু সেদ্ধ করে একটু তেলে নেড়ে ওপরে কালো মরিচগুঁড়ো ছড়িয়ে দেওয়া। আর কফি – ২৫ সেন্টে যত রিফিল চাও, তত। College Diner খোলা থাকত সারা দিন, সারা রাত। কফি হাউস যেমন কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের অঙ্গ, College Diner তেমনই Penn State-এর অংশ।

Penn State-এ যেমন আসবাবপত্র সামান্য দামের বিনিময়ে হাত বদল হত, তেমনি বাড়ির লিজও হাত বদল হত। ভাল বাড়ি, অর্থাৎ ক্যাম্পাস থেকে মোটামুটিভাবে হাঁটাপথ, একেবারে ভেঙ্গে পড়ে যাচ্ছে না, অথচ ভাড়াটা সাধ্যের মধ্যে – এতো রকম শর্ত মানা বাড়ির সংখ্যা বেশি ছিল না। হঠাৎ একদিন আমাদের বন্ধু জয়ন্ত এসে বলল,

“অয়ন, তোরা তো বাড়ি খুঁজছিস Fall থেকে। আমাদের নীচের তলায় একটা অ্যাপার্টমেন্ট ফাঁকা হবে। ওখানেও দুজন ভারতীয় থাকত। একজন চলে যাচ্ছে, অন্যজন sub-lease করে দিতে চায়, তুই নিয়ে নে। ও-ও ওখানে থাকবে না”।

এই বাড়িটায় আমরা ছিলাম তিন বছর। অ্যাপার্টমেন্টটা ground floor হলেও, একটা basement ছিল বলে রাস্তা থেকে বেশ খানিকটাই উঁচু। বড় living room, বড় জানলা রাস্তার ওপর, শোবার ঘরে দুটো জানলা, এমনকি বাথরুমেও একটা বড় জানলা, যেটা খোলা যায়! আলো আসে। আমরা ভারতীয়রা জানলা-বিহীন বাথরুম ভাবতেও পারি না। কিন্তু আমার প্রথম বাড়ি Nittany Apartments-এ তাই ছিল। একটা exhaust fan অবশ্য ছিল। আমি জেনেছিলাম Pennsylvania-তে নিয়ম আছে যে বাথরুমে হয় জানলা অথবা exhaust fan থাকতেই হবে। পরে Texas-এ থাকার সময় শুনেছিলাম এরকম কোনো নিয়ম সে রাজ্যে নেই।

Pugh Street-এর এই বাড়িটার আমার খুব পছন্দের ছিল অনেক কারণে। তার মধ্যে একটা বড় আকর্ষণ ছিল অভিজিৎ আর জয়ন্ত, আমাদের দুই প্রতিবেশী। এদের গল্প শুরু করলে এখন আর শেষ হবে না।