রন্ধন অমৃত-সমান
#
তখন বাংলায় নবাবি আমল| তুর্কি সেনানীদের সঙ্গে তাদের খাদ্যাভ্যাসও বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে জায়গা করে নিয়েছে| রান্না হয়েছিল বেগুন দিয়ে ধনে-পলতা, কলার থোড়, সর্ষে দিয়ে কচু, দুধ-লাউ, বরবটি-মরিচের ঝোল| নিরামিষ ব্যঞ্জন রেঁধে সনকা এবার খুশি মনে মাছ ও মাংসের পদগুলি রাঁধতে বসলেন| রুই মাছ, মাগুর মাছ, খরশুল মাছ, চিতলের কোল μ আরো কত কি!
ভিতরে মরিচ-গুঁড়া বাহিরে জড়ায় সূতা| তৈলে পাক করি রান্ধে চিঙড়ির মাথা॥
ভাজিল রোহিত আর চিতলের কোল| কৈ-মৎস্য দিয়া রান্ধে মরিচের ঝোল॥
.......
একে একে যত ব্যঞ্জন রান্ধিল সকল| শৌল-মৎস্য দিয়া রান্ধে আমের অম্বল॥
আরো রয়েছে ছাগ মাংসের কথা, যেটি রান্না করা হয়েছিল নারকোল ভাজা দিয়ে| অন্যত্র এও বলা আছে যে
নিরামিষ রান্ধে সব ঘৃতে সম্ভারিয়া| মৎস্যের ব্যঞ্জন রান্ধে তৈল-পাক দিয়া॥
মিষ্টির দিককেও হেলা করা হয়নি| দু-তিন প্রকারের পিষ্টক পায়েস μ
ঘৃত পোয়া চন্দ্রকাইট আর দুগ্ধপুলি| আইল বড়া ভাজিলেক ঘৃতের মিশালি॥
জাতি পুলি ক্ষীর পুলি চিতলোটী আর| মনোহরা রান্ধিলেক অনেক প্রকার॥
..........
উত্তম ক্ষীরসা দিয়া গঙ্গাজলী লাড়ু| ইক্ষুরস রাখিলেক ভরি লোটা গাড়ু॥
বাঙালির আদিযুগে সম্ভবত সন্দেশ বস্তুটি ছিল না| ছানা ছিল, তা জলখাবার বা সাত্বিক ভোজনের অঙ্গ হিসেবে চিনি দিয়ে খাওয়া হত| মিষ্টান্ন বলতে বোঝাত পায়েস আর পিঠে| মধ্যযুগে প্রথম সন্দেশের কথা জানা গেল| আর ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গলে চোখে পড়ল
কলাবড়া ঘিওর পাঁপর ভাজা পুলি| সুধা রুচি মুচি মুচি লুচি কতগুলি॥
লুচি তথা ময়দার উল্লেখ এইবার চোখে পড়ল| রান্না সম্বন্ধে আরো জানা গেল যে, গৃহিনী
কচি ছাগ মৃগ মাংসে ঝোল ঝাল রসা| কালিয়া দোলমা বাঘা সেক্চি সমসা॥
অন্য মাংস শিক ভাজা কাবাব করিয়া| রান্ধিলেন মুড়া আগে মসলা পুরিয়া॥
পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে নবাবি খানা বাঙালি গৃহিনীর পাকশালায় দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে| আর এই সমস্ত রান্না হয়েছিল অন্নদার পুজোয় ব্রাহ্মণভোজনের জন্য! ভাবা যায়? ব্রাহ্মণরা মধ্যযুগে কতই না আধুনিক ছিলেন| ইংরেজ আমলের মত খাওয়া-দাওয়া নিয়ে এত শুদ্ধাশুদ্ধিবিচার ছিল না বলেই তো মনে হচ্ছে|
Comments
Reply here
Randhan- Amrita Saman
খিদে পেতে গেলো যে????????????
Arunima
20-09-2020 22:48:21