ভালোবাসা


#

বাড়িটি প্রাচীন এবং জীর্ণ, তবে ভগ্ন বলা চলে না। একদা একান্নবর্তী পরিবারের বসবাস ছিল, তারপর গৃহবিবাদ, সম্পত্তি বিতরণ, শরিকি বিভাজন। উচ্চ শিক্ষার্থে অথবা কর্মসূত্রে কেউ কেউ চলে গেল দূরে। যোগসূত্র ক্রমশই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর। সামাজিক ক্রিয়া কর্ম এবং উৎসব উপলক্ষে একত্র হওয়ার প্রথাটুকুও বিলুপ্তপ্রায়। কেনই বা আসবে! এই বাড়িতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। স্যাঁতস্যাঁতে ঘরগুলি ধূলিমলিন, পরিচর্যার অভাবে ম্লান। প্রাচীন মানুষটির মৃত্যুর পর নিঃস্ব এবং রিক্ত। শুধু গাছগুলি বেড়ে ওঠে পাঁচিলে, দালানে, পূরণ করে দেয় সব শূন্যস্থান, ঘিরে ফেলে ঘরদোর। শিকড় চারিয়ে যায় বাড়িটির পাঁজরে পাঁজরে।

 "এ বাড়ি রেখে কি হবে? বিক্রি করে দেওয়াই ভালো", বাড়ির বর্তমান মালিকেরা একমত হয়। কিন্তু সকলের একসময় এক জায়গায় জড়ো হওয়া টুকু হয়ে ওঠে না। দিন গড়ায়। অবশেষে একদিন ওরা সবাই আসে। কিন্তু বাড়ির এ কি অবস্থা! ভিতরে ঢোকাই যে অসম্ভব। তার জন্য গাছ কাটাতে হবে।  গাছ কাটার লোক ঠিক করা হয়।

 সে লোক এসে সব দেখেশুনে বলে, গাছ কাটতে গেলে এ বাড়ি ভেঙে পড়বে, বাবু। গাছের শিকড় চলে গেছে বহু গভীরে। গাছের ভালোবাসার ভিৎটুকুর উপরেই দাঁড়িয়ে আছে যে এই বাড়ি। ওই ভালোবাসাটুকু চলে গেলে আর কি তাকে বাঁচানো যায়!