দ্বন্দ্ব মূলক বস্তুবাদ


#

সিদ্ধার্থের একটা অভ্যাস ছিল ও যা পড়তো সেটা আত্মস্থ করার জন্য চারপাশের সবাইকে পড়াতে শুরু করত। ছাত্রাবস্থায় এতে যথেষ্ট উপকৃত হয়েছি, কিন্তু পড়ানোর  পরিধি যখন বাড়তে বাড়তে দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ পর্যন্ত পৌঁছলো তখন ওকে নিবৃত্ত করতে বাধ্য হলাম।

তারপর বহু বছর কেটে গেছে। নিজের পড়া শেষ করে শিক্ষকতাকে আমি পেশা হিসেবে নিয়েছি। একদিন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ডাক্তার হরেন দাস ফোন করে বললেন, আমার এক ছাত্রকে পাঠাচ্ছি, ওর থিসিসের স্ট্যাটিসটিকস একটু দেখে দিও আর রেজাল্ট ডিসকাশন-টা ট্যালি করছে কিনা সেটাও একটু দেখে দিও। ডাকসাইটে শিক্ষকের বিশ্বাস ভাজন হতে পেরে এবং একজন জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে স্নাতকোত্তর ছাত্রর দায়িত্ব পেয়ে আহ্লাদে ডগমগ। দিন ঠিক হলো রবিবারের দুপুর। অন্য সব দিন দুজনেরই ডিউটি। বুবকা  তখন ছোট। ওকে বললাম, দুপুরে একজন দাদা আসবে, আমরা কাজ করব, তুমি খেয়ে দাদুর কাছে ঘুমাবে, আমি বিকেলে তোমার সঙ্গে খেলবো।

নির্ধারিত দিনে ছাত্রটি এসে পৌঁছালো (ধরে নাও তার নাম অমিত)।এসে বুবকার হাতে একটা ক্যাডবেরি ধরিয়ে বললো, আরে বুবকা না! কত বড় হয়ে গিয়েছিস, ক্রিকেট খেলি?

বুবকা তার প্রিয় বিষয় পেয়ে গেল।  তুমি ক্রিকেট খেলতে পারো? মা কিছু পারেনা। হলুদ বলে খেলবে না গোলাপি বলে?

আমি বললাম, দাদার কাজ আছে, এখন খেলা হবে না, তুমি ঘুমাতে যাও।

অমিত আমার হাতে একটা সিডি ধরিয়ে দিয়ে বলল,  এতে সব আছে আপনি দেখুন, দেখলেই বুঝতে পারবেন। আমি একটু ওর সাথে খেলে আসি।

ওরা খেলা শুরু করলো, আমি সিডি চালিয়ে বসলাম। অজস্র ভুল, প্রচুর সংশোধন দরকার। ওকে বললাম, চা খাবি আয়, আর ভুল গুলো দেখে নে।

ও বলল, ম্যাডাম, আমি চা খাই না। আমরা টি টেন খেলছি,আপনি ততক্ষণ সংশোধন করতে থাকুন। আমাদের খেলা হতে হতে আপনার হয়ে যাবে বোধহয়। নাহলে বাকিটা আমি করে নেব। আমি গজগজ করতে করতে চায়ের কাপ নিয়ে ভুল সংশোধনে বসলাম। খেলা শেষ করে সংশোধিত সিডি নিয়ে অমিতের প্রস্থান।

দুপুরের পরিশ্রমে ঘুমিয়ে পড়া বুবকার দিকে চেয়ে ভাবলাম, শিক্ষকসত্তা এবং মাতৃসত্তার বিরোধ হলে কোন দিক নেওয়া উচিত। এইসব জটিল সমস্যা মাথায় এলে অবশ্য আমার ঘুম পেয়ে যায় এবং ঘুম থেকে উঠে সব ভুলে যাই। এবারও তার অন্যথা হলো না।

তারপর আবার বহু বছর কেটে গেছে। অমিতও শিক্ষকতায় ঢুকেছে। ওর সঙ্গে একদিন হঠাৎ দেখা।বলল, ম্যাডাম আপনার কথা সবসময় ভাবি। বললাম নিশ্চয়ই ছাত্ররা যখন বিরক্ত করে,  তখন ভাবিস,  সেদিন তুই আমাকে কত জ্বালাতন করেছিলি। অমিত খুব অবাক হয়ে বলল, না তো,  তা কেন ভাববো!আমি ভাবি, যদি আজ আপনি এখানে থাকতেন, তাহলে আমাকে কোন কাজই করতে হতো না, সব আপনি করে দিতেন।

সত্যিই বুঝতে পারলাম না, এটা প্রশংসা না ঠাট্টা।

বলেছিলাম না দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ বেশ জটিল! কেন যে সিদ্ধার্থর থেকে ছোটবেলায় বেসিক জ্ঞানটুকু অর্জন করিনি!