হোম ওয়র্ক


#

কলকাতা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে প্রাকটিক্যাল ক্লাস নিচ্ছি, এমন সময় আমার ড্রাইভার বাবুর ফোন, "দিদি, স্কুল ছুটি হয়ে সব বাচ্চা বেরিয়ে গেল, বুবকা তো এখনো বেরোলো না। "নির্ঘাত শাস্তি পেয়েছে, অপেক্ষা করো," বলে লাইন কেটে দিলাম। কিন্তু মনটা খুঁতখুঁত করতে লাগলো। বুবকা বিভিন্ন ধরনের শাস্তি পেলেও ছুটির পর কখনো আটকে থাকে নি। এই শাস্তিটা ডন বস্কো দেয় বলেও শুনিনি ওর কোন বন্ধুর মায়ের কাছে। আমার ঘ‍্যান ঘ‍্যান শুনে কলীগরা বলল, হেড ম্যাডামকে বলে চলে যা। ন্যাশনাল থেকে ডন বস্কো ঢিল ছোঁড়া দূরত্ব। দৌড় লাগালাম। গেটে পৌঁছতে দেখি হাসিমুখে শ্রীমান বেরিয়ে আসছে।

 - “কিরে শাস্তি পেয়েছিলি কেন?”

 - “শাস্তি পাইনি তো, মিস ডেকেছিল। “

- “কেন?”

- “সি গট কনফিউজড। “

 এবার আমার কনফিউশন এর পালা । মিস এর কনফিউশন দূর করতে তোকে ডাকবে কেন?

- “আসলে আগের দিনের হোম ওয়র্কটা রণজয় আমার থেকে টুকেছিল তো। মিস সেটা ধরে ফেলেছিল। “

 পথে এসো, তার মানে শাস্তিই পেয়েছিল। 

- “তা রজয় আর ছেলে পেল না, তোর মত ওস্তাদের খাতা দেখে লিখতে গেল!”

- আরে, ভালো ছেলেরা খাতা দেয় নাকি! তুমি মানো আর নাই মানো, ওদের আমি ভালো ছেলে বলে মানি না।“

 প্রসঙ্গ পাল্টাই। হোম ওয়ার্কের কথা বলিস নি তো।

- “তোমার প্রিয় বইয়ের ওপর ১0 লাইন লিখতে বলেছিল। নিজেই লিখতে পারলাম, তাই তোমায় বলিনি।:

- “কি লিখেছিলি?”

- “ব‍্যাটম‍্যান। “

একটু বিষম খেলাম,  সেতো কমিকস।

- “তো? কমিকস কি বই নয়?”

সে তো অবশ্যই। বিক্রির হিসাব দেখলে..  “তা রণজয় ও ব‍্যাটম‍্যান লিখেছে?” মিস এর কনফিউশন এর কারণটা একটু যেন বুঝতে পারছি। 

- “বললাম তো, টুকেছে। “

- “তারপর কি হল?”

- “মিস বললো, কে কার খাতা দেখে লিখেছে?” রণজয় বলল, “আমি শায়কের খাতা দেখে লিখেছি। উইল ইউ পানিশ মি?” মিস বলল, “নো ডিয়ার, তবে তোমরা দুজন ছুটির পরে আমার সঙ্গে দেখা করো।“ তারপর আমরা যেতে রণজয়কে জিজ্ঞেস করল, “টুকেছো কেন?” ও বলল, “আমিতো কোন বই পড়িনি, তাই আমার কোন প্রিয় বই নেই।“ তারপর আমাদের সঙ্গে গল্প করল। রণজয়ের মা অসুস্থ শুনে স্যরি বলল।

- “আর তোকে কি বলল?”

-আমাকে বিশেষ কিছু বলেনি।

 মনে মনে বলি, অরিজিনালিটি দেখে ঘাবড়ে গেছে বোধ হয়। 

- “কিন্তু তুইতো জাঙ্গল বুক লিখতে পারতিস, ওটা তো তুই পড়েছিস, ভালওবাসিস। “

- “বারে, বইটা কেন প্রিয় লিখতে হবে না? লিখেছি আমিও ব্যাটম‍্যানের মত সেভিয়ার অফ ম্যানকাইন্ড হতে চাই।“

- “মোগলি ও তো সেভিয়ার। “

- “না, আমি সেভিয়ার অফ জাঙ্গল হতে চাইনা। “

- “আচ্ছা, তা সুপার ম‍্যান, স্পাইডারম্যান ছেড়ে ব্যাটম্যান কেন?” আমিও নাছোড়।

- “তুমি কিছুই বোঝনা। ওরা তো আর্টিফিশিয়াল। সুপার ম‍্যান ক্রিপ্টোনাইট। স্পাইডারম্যান ইনজেকশন নিয়ে সুপার পাওয়ার পেয়েছে। একমাত্র ব্যাটম্যান সব কিছু নিজে করে। এ পিয়োর হিউম্যান বিয়িং। “

- সাবাস, মনে মনে বলি, তোর বাংলা ভাষা দুর্বল হতে পারে, তোর উদ্ভট উত্তর পড়ে মিস কন্ফিউজড হতে পারে, কিন্তু আমার কোন কনফিউশন নেই। মানব সভ্যতার এই ঘোর সংকটে একজন খাঁটি মানুষের যে দরকার, এই বোধটুকুর জন্যই তোকে ফুল মার্কস দেওয়া যায়।