বাড়ি তো কেবল ইঁট কাঠ দিয়ে তৈরি হয় না, মানুষ না থাকলে বাড়ির আর কি মূল্য...
মার্জার কাহিনী
#maarjarkahini
বাড়ি তো কেবল ইঁট কাঠ দিয়ে তৈরি হয় না, মানুষ না থাকলে বাড়ির আর কি মূল্য ! আমাদের বাড়িতে অবশ্য শুধু মানুষ নয় প্রচুর মনুষ্যেতর প্রাণীর বাস, আর আমার ধারণা মনুষ্যোত্তর আরও কিছু থাকলেও থাকতে পারে, কারণ প্রায়শই আমি কোন কোন জিনিস কিছুতেই খুঁজে পাইনা, আবার যখন খুঁজিনা তখন ঐ পুরনো খোঁজার জায়গা থেকেই সেগুলো পাওয়া যায়।এসব অলৌকিক ঘটনা বারবার প্রত্যক্ষ করে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই বাড়িতে আরো কিছু আছে, যা আমাদের জানা বোঝার বাইরে। সে প্রসঙ্গ থাক, জানা-বোঝার মধ্যেই অগুনতি প্রাণী আছে এ বাড়িতে। যেমন আরশোলা, গরম পড়তেই তারা গুপ্ত গহবর থেকে বেরিয়ে আসে। নেংটি ইঁদুর ও ধেড়ে ইঁদুর আছে বিস্তর। ইঁদুর মারা বিষ, ইঁদুর ধরা কল, কোন কিছু দিয়েই তাদের হাত থেকে উদ্ধার পাবার কোন সম্ভাবনা নেই।
একবার একটা আহ্লাদী বিড়াল আসা শুরু করলো, সাদা ধবধবে গা, লেজে দুটো কালো ছোপ। সে বেশ ভদ্র, সে জানতো কখন রান্না শেষ হয় এবং কোথায় আবর্জনা ফেলা হয়। সেখান থেকে সে কিছু খাদ্য সামগ্রী সংগ্রহ করত। আমি কিছুদিন তাকে তাড়িয়ে দেবার চেষ্টা করেছি। তারপর আমার স্বভাবজাত অনুসন্ধিৎসায় তার গতিবিধি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ করেছি। যখন বুঝেছি এটি একটি ভদ্র মার্জার সন্তান তখন আর ওর পেছনে সময় নষ্ট করিনি। যদিও এটা দেখার খুব ইচ্ছা ছিল, ওই আবর্জনা থেকে ও কি খায়, কিন্তু নানা কারণে সেটা দেখে ওঠা সম্ভব হয়নি।
সিদ্ধার্থর বাড়ি ফিরতে সাধারণত দেরি হয় এবং এইসব সাংসারিক জটিলতা ওকে জানানো আমি প্রয়োজন বোধ করি না। একদিন ও তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছে এবং দেখতে পেয়েছে একটা বিড়াল ঘরে ঢুকেছে। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার যা, যা, হ্যাট, হ্যাট। আমি ওকে গম্ভীরমুখে জানালাম উনি ইদানিং রোজ ই আসেন, খেয়েদেয়ে চলে যান, কাউকে বিরক্ত করেন না। তারপর তাকে সবিস্তার বিড়াল কাহিনী বর্ণনা করা হলো। শুনে সিদ্ধার্থর কি হা হুতাশ। তাহলে তো আজ বেড়ালটার খাওয়া হলো না, কি হবে ! একদিন না খেলে কিছু হবে না, অন্য জায়গা থেকে নিশ্চয়ই খেয়ে নেবে, আমার সান্ত্বনা। কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল বিড়ালটা একটা কোণে চুপ করে বসে আছে। সিদ্ধার্থ কে বললাম সরে এসো, ও ঠিক খেয়ে নেবে, কিন্তু সিদ্ধার্থর তখন প্রায়শ্চিত্ত পেয়েছে। তাই একটা থালায় দুধ নিয়ে বিড়াল কে ডাকতে লাগলো, আয় আয়। বেড়াল এ জাতীয় আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত ছিল না। সে হ্যাট, হ্যাট যদি বা বোঝে, আয় আয় জাতীয় মধুর সম্ভাষণ বোধহয় তার জীবনে প্রথম।সে ঊর্ধ্বশ্বাসে বাড়ি ছেড়ে দৌড় দিল। সিদ্ধার্থ ওর পিছনে দুধ নিয়ে তাড়া করল, তারপর থালা চলকে অধিকাংশ দুধ মাটিতে। আমার কাজ বাড়লো, বলাই বাহুল্য। তা সে যাই বলো না কেন, ইঁট-কাঠের বাড়িতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার জন্য এটুকু দৌড়ঝাঁপ তো করাই যায়, তাই না?
Comments
মারজার কাহিনী
সুলিখিত
ananda mukhopadhyay
31-05-2020 13:05:33
Satkahan
Khub bhalo lekha
Mamata Dasgupta
05-06-2020 23:04:22
Reply here
Khub bhalo
Amader ekta erom chilo chotobelay... mone pore gelo... shundor lekha ❤
Ananya
30-05-2020 21:21:53