স্যান্টোরিনি
#santorini
তারিখটা অভিনব, প্যালিনড্রোমিক, ৬-১০-২০১৬। এই তারিখেই রোম থেকে যাত্রা স্যান্টোরিনির উদ্দেশ্যে। ঈজিয়ন সীর মধ্যে দ্বীপপুঞ্জঃ স্যান্টোরিনি। আগে নাকি একটাই গোল দ্বীপ ছিল। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে এখন একটা কড়াই এর আকারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেকগুলি ভূভাগ, থিরা, থেরাসিয়া, অ্যাসপ্রেনিসি, নিয়া কমেনি। আমাদের গন্তব্য থিরা, বিমানবন্দরের নামও তাই। আকাশ থেকে দেখা গেল ঈজিয়ন সীর অদ্ভুত নীল রং। একেই কি বলে আল্ট্রামেরিন! এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি নিয়ে যাত্রা শুরু হোটেলের পথে। অস্তগামী সূর্য তখন আকাশের নীল প্যালেটে যাবতীয় বর্ণচ্ছটার খেলা শুরু করেছে আর সমুদ্রের নীলে আঁকা হয়ে যাচ্ছে তার প্রতিফলন। ঘড়িতে সন্ধ্যে সাড়ে ছটা। শুধু সূর্যাস্ত দেখার লোভে এখানে বার বার আসা যায়। হোটেলটি সুন্দর, আরামপ্রদ। খেতে যেতে হল কাছের একটি রেস্তোরাঁয়। ছোট্ট ছোট্ট কাঠের টেবিল চেয়ার ভারী সুন্দর করে সাজানো। দূর থেকে দেখলে খেলনা মনে হয়। কিন্তু তিনজনের বসতে কোন অসুবিধা হলো না। খেলাম গ্রীক খাবার মুসাকা।
পরদিন বাস ধরে চলে গেলাম একদম দক্ষিণ প্রান্তে। সমুদ্রের পাশে শান্ত গ্রাম, নাম একরোটিরি। সেখান থেকে নৌকো ছাড়ে রেড, হোয়াইট আর ব্ল্যাক বীচের দিকে।কখন নৌকো ছাড়বে তার জন্য বসে না থেকে হাঁটা লাগালাম গ্রামের পথ ধরে।কেভ অফ নিকোলা্স, নামটা খুব পছন্দ হল,ভাবলাম দারুণ কোন দ্রস্টব্য স্থান। হাঁটতে লাগলাম একটা তীর চিহ্ন ধরে। গিয়ে যেখানে পৌঁছলাম সেখানে এক বৃদ্ধা সবজি কাটছিলেন। জিগ্যেস করাতে বল্লেন, সেটাই নিকোলাসের গুহা। আমরা কি খেতে চাই, তা যেন বাইরের দোকানে বসে বলি। গ্রামের ঘরগুলি পাথর কেটে বানানো। তাই বোধহয় ঘরগুলিকে ওরা গুহা বলে। বোকা হয়ে আবার ফিরে এলাম জেটিতে।
পরিক্রমার নৌকা ছাড়ল প্রায় দুপুর সাড়ে এগারোটায়। নীল সমুদ্রের বুকে লাল পাথরের সুউচ্চ বিস্তার আর সেই পাথর ভেঙে ভেঙে ছোট ছোট নুড়ি দিয়ে তৈরী রেড বীচ, স্থানীয় নাম কোক্কিনি। কেউ কেউ নেমে গেল সূর্যস্নান বা সমুদ্রস্নানের জন্য। আমরা এগিয়ে গেলাম হোয়াইট বীচের দিকে। এবার পাহাড় সাদা রঙের। সেই পাহাড়ের ছায়া পড়েছে জলে। এই পাহাড় ক্ষয়ে ক্ষয়ে তৈরী এই তট। আবার কিছু পাহাড়ী গুহায় একান্ত সমুদ্রস্নানের আয়োজন। প্রচুর পিউমিস স্টোন পাওয়া যায় এখানে, নৌকায় টিকিট সংগ্রহকারী গ্রীক সুন্দরী জানাল।
দূর থেকে দেখা যায় লাইট হাউসের চূড়া। সূর্যাস্ত দেখার মনোরম জায়গা। আমাদের মাথার উপর গনগনে সূর্য। অতএব এগিয়ে গেলাম ব্ল্যাক বীচের দিকে। আগ্নেয়গিরির কালো শিলা দিয়ে তৈরী এই তটেও স্নানের জন্য নিত্যযাত্রী সমাগম। এর পর ফিরে এসে কেভ অফ নিকোলাসেই দ্বিপ্রাহরিক আহার গ্রহণ।
একেরোটিরি ছেড়ে পরবর্তী গন্তব্য ফিরা। স্যান্টোরিনির রাজধানী, যা থিরা ভূভাগের কেন্দ্রে অবস্থিত। প্রচুর দোকান ছাড়াও এখানে আছে একটি আর্কিওলিজকাল মিউজিয়ম। কেব্ল্ কারে চড়ে যাওয়া যায় পুরানো বন্দর এলাকায়। সেখানে থেকে স্যান্টোরিনির অন্যান্য দ্বীপগুলি ঘুরিয়ে দেখানোর ব্যবস্থা আছে। আমরা যেহেতু স্যান্টোরিনি থেকে প্রায় ঐ পথেই জাহাজে করে যাবো আথেন্সের পাইরিয়াস বন্দর, তাই আথেন্সগামী জাহাজের টিকিট সংগ্রহ করলাম। তারপর হোটেলের পথে যাত্রা। আমাদের হোটেল যেখানে, সেই জায়গায় নাম মেগালোচোরি। এখানকার আঙুর বাগান বিখ্যাত। সেই আঙুর থেকে নাকি তৈরী হয় এক অদ্ভুত ওয়াইন। সমুদ্রের নোনা হাওয়া আর আগ্নেয়গিরির পাথুরে মাটির রসায়ন এই সুরাকে করে তোলে স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। ঘরে তৈরী সুরাও বিক্রী হয় সব রেস্তোরাঁয়। সেদিনও সূর্যাস্ত দেখতে গেলাম হোটেলের কাছে একটা উঁচু ঢিপিতে উঠে। সেখান থেকে সাগর ছোঁয়া দিক্চক্রবাল দেখা যায়। তবে ফাউ হিসাবে আমরা দেখলাম আর এক দৃশ্য। লাল টুকটুকে পোশাকে সজ্জিত এক সুন্দরীর দিকে ক্যামেরা তাক করা আর সেখানে জমায়েত বিস্তর লোক। হয় কোন বিয়ের অনুষ্ঠান না হয় কোন সিনেমার শুটিং। কিন্তু জিগ্যেস করার মত কাউকে পাওয়া গেল না। আমরা দ্বিতীয়বার অপরূপ সূর্যাস্ত দেখলাম মুগ্ধ হয়ে। পরের দিন গন্তব্য উত্তরের দিকে, থিরার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রাম ইয়া’র উদ্দেশ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইয়া’র আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। রাস্তা মসৃণ, দুধারে অজস্র দোকান, উচ্চমানের হোটেল। অধিকাংশ বাড়ী এখানেও পাথর কেটে বানানো। এখানকার বন্দরের নাম আমৌদি। ২১৪টি সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে সেখানে পৌঁছনো যায়। যাদের সাঁতার কাঁটার শখ তারা অবশ্যই যাবেন। আমাদের ফেরার তাড়া। পরের দিন সকাল ৬টায় জাহাজ ছাড়বে আথেন্সের উদ্দেশ্যে। ব্যাগ গুছোতে হবে, হোটেলে বিল মেটাতে হবে, গাড়ীর ব্যবস্থা করতে হবে।
মেগালোচোরি ফিরে আবার গেলাম হোটেলের সবচেয়ে কাছে সমুদ্রতীরের একটি গীর্জায়। এখানকার গীর্জাগুলি বেশ অভিনব। জানলাম গ্রীক বা রোমান মন্দির, যাকে ডোরিক টেম্পল বলে সেগুলিই পরে ক্যাথলিক চার্চে রূপান্তরিত হয়েছে। নীল সমুদ্রের ধারে একদম সাদা রঙের গীর্জা। কোন কোন গীর্জার মাথায় ডোমটুকু নীল রঙের। এইসব গীর্জায় সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন হল যেদিন ভার্জিন মেরী স্বর্গে প্রবেশ করেছিলেন। আর সেই তারিখটি কবে আন্দাজ করুন তো। ১৫ই আগস্ট।
পরের দিন ভোর ছটায় অন্ধকার চিরে এগিয়ে চলল আমাদের গাড়ী বন্দরের দিকে। বিশাল ৮ তলা জাহাজ চড়ে যাত্রা শুরু আথেন্সের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সে তো অন্য গল্প।
Comments
Santorini
So beautiful and vivid description!
Pranita
12-06-2020 07:14:53
Saatkahon
Beautiful description.. will be very helpful for the person who will travel..
Sutapa Das
12-06-2020 09:21:39
Mon Na Diye Aar Parina
Lucidly described of a place about which even the person who is totally unaware of can visualise easily and hence, can plan for the tour accordingly.
Biswajit Saha
12-06-2020 10:12:15
Santorini
Very nicely described. Could imagine the pictures as I went through the write up.
Mamata Dasgupta
28-06-2020 20:52:22
Reply here
Saatkaahon. In
Very beautifully written... So well described... Loved each and every details you have high lighted. Visited Santaroni way back but spent only few hours there.. We stayed at Heraklion, Crete Island... After reading your passage, khoob yeiche korche aabar jete... Do write again.. Thanks ????
Moushumi Namboodiry
12-06-2020 06:57:16