ভাঁড়ার


#

এই বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের বিপুল সমাগম আর তাদের আপ্যায়নের জন্য ভাঁড়ারে খাদ্য সামগ্রী মজুত রাখাটা অবশ্য কর্তব্য। প্রথম প্রথম ব্যাপারটার গুরুত্ব অনুধাবন করিনি। শ্বশুর শাশুড়ির ছত্রছায়ায় দিব্যি ছিলাম। ক্রমশ যখন দায়িত্ব ঘাড়ে এসে পরল, দেখি সে এক মস্ত বিড়ম্বনা। প্রতি দিনই দোকানে যেতে হয়। আগে একটা বিশেষ দোকান থেকে আমাদের জিনিসপত্র আসতো, আমার বেশ লজ্জাই করত প্রতিদিন অত বাজার করতে। খালি মনে হতো দোকানদার ভাবছে, বাপরে, এরা কত খায়!

 সিদ্ধার্থকে সমস্যার কথা বলতে উড়িয়ে দিল, বলল জিনিস বেশি বিক্রি হলে দোকানদার খুশিই হয় আর ওর বয়েই গেছে, কে কবে কি কিনল, কতটা কিনল এত কিছু মনে রাখতে। আমি অগত্যা ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন দোকান থেকে জিনিস কেনা শুরু করলাম।

 একদিন একটা ঘটনা ঘটলো। ততদিনে ছেলে একটু বড় হয়েছে এবং একটি নিশাচরে পরিণত হয়েছে। সারা সন্ধ্যে ঘুমিয়ে, রাতে পড়াশুনো, হোম ওয়ার্ক সব করে। একদিন বিকেলে সিদ্ধার্থ সবান্ধব বাড়ি ফিরে আবিষ্কার করল চিজলিং বিস্কুটের শিশি এবং ক্রিম বিস্কুটের শিশি খালি, আমি ১00 শতা্ংশ নিশ্চিত আগেরদিন শুতে যাবার আগে ওদুটো ভর্তি ছিল। সিদ্ধার্থ কে বললাম নিশ্চয়ই রাতে বুবকা খেয়েছে। সিদ্ধার্থ যথারীতি আমাকে নস্যাৎ করে বলল, যেটা আমরা বড়রা তিনজনে মিলে একদিনে খাই, সেটা ঐটুকু ছেলে একা খেয়েছে হতে পারে? নিজের ভুল স্বীকার করতে শেখো। প্রমাণ নেই অতএব চুপ করে থাকতে হল, তবে সত্যি কথা এবং প্রতিভা বেশিদিন চাপা থাকে না।

ক্রমশ সিদ্ধার্থ সত্যিটা উপলব্ধি করল, তবে ততদিনে বন্ধু সমাগম কমে এসেছে, সিদ্ধার্থ অনিদ্রা রোগে আক্রান্ত। ফলে ভাঁড়ারের রসদের ভাগীদার বেশিরভাগ সময়ই বাবা এবং ছেলে।

 করোনার প্রকোপে প্রায় বিস্মৃত অতীতের মতো ভাঁড়ার মজুদ করা আবার শুরু করলাম। খাবার পরে মুখশুদ্ধি খাওয়া আমাদের অভ্যেস। করোনাতংকে সেটি আনতে ভুলে গিয়েছিলাম। সিদ্ধার্থ দেখি একদিন অনেকগুলো রা্‍ংতা মোড়া চুরন কিনে এনেছে। রাতে খেয়ে উঠে বললাম একটা হজমি দাও তো। সিদ্ধার্থ দেখি অপরাধীর মতো চেয়ে আছে। আমি বললাম সব খেয়ে ফেলেছো? একদিনে? সিদ্ধার্থ বলল, ওগুলো স্টোর করা যায় না, ভোলাটাইল, উবে যায়। পরেরদিন অবশ্য আমাকে এনে দিয়েছিল। আর বললে বিশ্বাস করবে না,আমিও পরখ করে দেখেছি, ওগুলো সত্যিই ভোলাটাইল, উবে যায়।